Monday, September 23, 2013

kushum shikdar close picture




































শুধুই ‘কুসুম’—নামটির আগে-পিছে আর কিছু নেই। ঢাকার মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে তিনি যখন পড়তেন, আগে-পিছে কিছু না থাকায় নাম নিয়ে কম বিপত্তি পোহাতে হয়নি তাঁকে। এরপর যখন মাধ্যমিক পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় এল, নানাজনের নানা কথায় অবশেষে কুসুম নামের মেয়েটি নামের শেষে যুক্ত করলেন বংশ-পদবি—হয়ে গেলেন কুসুম সিকদার।
কুসুম সিকদার প্রথমবার আলোয় আসেন ২০০২ সালে, ‘লাক্স-আনন্দধারা মিস ফটোজেনিক’ হিসেবে। এরপর পদ্মা-মেঘনায় জল বয়ে গেছে ঢের। কুসুমের জীবনেও এসেছে পরিবর্তন—‘সিঙ্গেল’ তকমা ঘুচিয়ে বৈমানিক লায়েস ইসলামের সঙ্গে ‘ডাবল’ হয়ে টোনাটুনির সংসার পেতেছেন, তা-ও অনেক দিন। তারপর লালটিপ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১২ সালের মেরিল-প্রথম আলো তারকা জরিপ পুরস্কারে জয়া আহসানের সঙ্গে যৌথভাবে সেরা অভিনয়শিল্পী (নারী) হয়েছেন।
কুসুমের ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে তাঁর বসার ঘরে গিয়ে দেখা গেল লজ্জাবনত কুসুম সিকদারের ছবির পাশের ক্রেস্টস্ট্যান্ডে যেন জ্বলজ্বল করছে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ক্রেস্টটি। ৫ আগস্ট দুপুরে আমরা যখন এই তারকার সঙ্গে আড্ডায় মশগুল, কসুম তখন জানালেন, সেই স্কুলবেলায় তাঁর কুসুম থেকে কুসুম সিকদার হয়ে ওঠার গল্প, যা লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে।
পাঠক, আজ আপনি যে কুসুমকে অভিনয়শিল্পী হিসেবে চেনেন, তাঁর শুরুটা হয়েছিল সংগীতশিল্পী হিসেবে। তুমি আজ কত দূরে, জীবনের যত চাওয়া ও অদল-বদল শিরোনামে তাঁর তিনটি অ্যালবামও বেরিয়েছিল একসময়। তারপরই তো লাক্স তারকা।
‘আমার আগে মৌসুমী, পপি ও অপি করিম লাক্স তারকা হয়েছিলেন। তাঁরা সবাই-ই সু-অভিনেত্রী। তাঁদের দেখে আমিও অভিনয়ে এসেছিলাম। কিন্তু প্রথম প্রথম যখন অভিনয় করতাম, অভিনয়ের “অ”-ও জানতাম না। পরে ধীরে ধীরে সবকিছু শিখেছি। এখন নাটক কি চলচ্চিত্র—যেকোনো কাজ করার আগে প্রচুর হোমওয়ার্ক করি আমি।’
কথা বলতে বলতে চোখের চশমাটি ঠিক করে নিলেন কুসুম। ‘চশমা ছাড়া আমি একদম অচল।’
তাঁর মুখ থেকেই আমরা জানতে পেরেছি, চোখের সমস্যার কারণে চশমা ছাড়া সবকিছুকেই ডি-ফোকাস দেখেন তিনি। কুসুমের চোখে ‘স্ফেরিক্যাল’ ও ‘সিলিন্ডিক্যাল’—দুই ধরনের সমস্যা রয়েছে। তাই কোনো কিছুকেই ফোকাস করতে পারে না তাঁর চোখ।
তবে চশমা ছাড়া খালি চোখে কীভাবে অভিনয় করেন কুসুম?
প্রশ্ন শুনে খুব জোরে হাসির শব্দ শোনা গেল তাঁর মুখে। তারপর খানিকটা দম নিয়ে বললেন, ‘আরে, এ সমস্যার জন্যই তো মাঝেমধ্যে ক্যামেরার সামনে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে থাকি। হয়তো আমার দাঁড়ানোর কথা ক্যামেরার সামনে, কিন্তু চোখে ফোকাস না থাকায় ক্যামেরায় পেছন দিয়ে দাঁড়াই—এ রকম ঘটে হরহামেশাই। আবার ট্রলি শট নেওয়ার সময় চোখে না দেখার কারণে কখনো কখনো আমি ট্রলিতেই উঠে পড়ি...হা হা হা।’
হাসি একটু স্তিমিত হলে কুসুমের কাছে এবার প্রশ্ন লালটিপ এবং মেরিল-প্রথম আলো তারকা জরিপ পুরস্কার-২০১২ প্রাপ্তি প্রসঙ্গে।
‘লালটিপ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে আমার ভয় ছিল, দর্শক আমাকে গ্রহণ করবেন কি না। কেননা, দেখা গেছে টিভির অভিনয়শিল্পীদের চলচ্চিত্রের পর্দায় দর্শক অনেক ক্ষেত্রে গ্রহণ করেন না। তবে ছবিটি মুক্তির পর আমি অবিশ্বাস্য রকমের সাড়া পেয়েছি। তা ছাড়া এ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারপ্রাপ্তি কাজের ক্ষেত্রে আমাকে আরও বেশি সতর্ক করেছে—এখন থেকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে হবে। আসলে যেকোনো পুরস্কারই তো দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেয়। এ ছবিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য ইমপ্রেস টেলিফিল্মের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
কুসুমের এই কথাগুলো যদি একটু গুরুগম্ভীর শোনায়; তবে সেদিন হাসতে হাসতে তিনি আরও যেসব কথা বলেছেন, তার চৌম্বক অংশও একটু বলি।
এখনকার নাটক নিয়ে কুসুমের ভাষ্য হলো, ‘দর্শক এখন আমাদের দেশের নাটকের চেয়ে কলকাতার নাটক বেশি দেখেন। কারণ, নাট্যরচনা বা নির্মাণ—দুই দিকেই ওরা আমাদের চেয়ে বেশি গুছিয়ে কাজ করেন। ওদের পেশাদারি আমাদের চেয়ে বেশি। তাই নাটকে কাজের ব্যাপারে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছি আমি। আমার সব স্বপ্ন এখন চলচ্চিত্র ঘিরে।’
সেই স্বপ্নের দিশা পেয়েই কি চোখে-মুখে অন্য রকম দ্যুতি ফুটে উঠল কুসুম নামের মেয়েটির?